২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে মেধা বনাম কোটা বিতর্ক। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭০ বা তার বেশি নম্বর পাওয়া হাজারো শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিপরীতে, ৪১ থেকে ৪৬ নম্বর পাওয়া প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোটার সুবিধায় মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
ফলাফলের হাইলাইটস: মেধা তালিকার শীর্ষে কারা?
চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুশোভন বাছাড়। তার প্রাপ্ত নম্বর ৯০.৭৫। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের মো. সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ, যার প্রাপ্ত স্কোর ৯০.৫০।
কোটা সিস্টেমের প্রভাব: মেধার সঙ্গে আপস?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার পরীক্ষার পাস নম্বর ছিল ৪০। পাস নম্বর পেয়েই মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ পশ্চাৎপদ উপজাতি শিক্ষার্থীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
- মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বরাদ্দ আসন: ২৬৯টি।
- মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ: মাত্র ১৯৩ জন।
- তাদের প্রাপ্ত নম্বর যাচাই-বাছাই শেষে ভর্তির জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।
কোটার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি
কোটা সিস্টেমের মাধ্যমে সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন এবং সাম্য নিশ্চিত করার লক্ষ্য থাকলেও এই ব্যবস্থার ফলে মেধাবীদের বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এবারের ফলাফলেও এই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ক্ষোভ:
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মাত্র ৪১ নম্বর পেয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, “কোটা ব্যবস্থার কারণে মেধাবীরা প্রতিনিয়ত অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন। ৭৩ নম্বর পাওয়া একজন শিক্ষার্থী চান্স পাচ্ছে না, অথচ ৪১ নম্বর পেয়ে কেউ মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছে—এটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অন্যায়।”কোটা সংস্কার দাবি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহিন সরকার লিখেছেন, “৪১ পেয়ে কোটার জোরে মেডিকেলে চান্স পাওয়া আর ৭৩ পেয়েও চান্স না পাওয়ার এই বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের সময় এসেছে।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, “ভর্তি পরীক্ষায় এখনো কীসের কোটা? এই বৈষম্য আজই বন্ধ করতে হবে।”
অনেকে মনে করেন, কোটা ব্যবস্থা সমতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন, তবে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় এটি মেধার সঙ্গে আপস করছে। তাদের মতে, পাস নম্বরের ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া হলেও মেধার প্রতি সুবিচার করতে কোটার সিস্টেম সংস্কার জরুরি।
পরীক্ষার পরিসংখ্যান: পাসের হার ও অংশগ্রহণ
- আবেদনকারীর সংখ্যা: ১,২৫,২৬১ জন।
- পরীক্ষার্থীর সংখ্যা: ১,৩১,৭২৯ জন।
- উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী: ৬০,০৯৫ জন।
- পাসের হার: ৪৫.৬২%।
- ছেলে শিক্ষার্থী: ৩৬.৮৭%।
- মেয়ে শিক্ষার্থী: ৬৩.১৩%।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, “কোটা নিয়ে চলমান বিতর্ক আমরা খতিয়ে দেখছি। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজন সুযোগ পেয়েছেন, তাদের প্রাপ্ত নম্বর কী—সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হবে।”
কোটা বনাম মেধা: ভবিষ্যৎ কোন দিকে?
বর্তমান ব্যবস্থায় কোটা সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা এবং এর নেতিবাচক দিক নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। মেধা বনাম কোটার এই টানাপোড়েনে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার কি এই সমস্যার সমাধান হতে পারে? নাকি এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সমঝোতার প্রয়োজন?
আপনার মতামত কী? কোটা ব্যবস্থা কি মেধার প্রতি অবিচার করছে নাকি এটি সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক? মতামত জানিয়ে আলোচনায় যোগ দিন।
it is unfair, total unfair
উত্তরমুছুনIndeed
মুছুন