২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় এ ভর্তি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় অংশ নিতে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬১ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছিলেন। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি, যার মধ্যে কোটা সংরক্ষিত আসনও রয়েছে। হিসেব অনুযায়ী, প্রতি আসনের বিপরীতে প্রায় ২৫ জন পরীক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরি করা হয়, যেখানে পরীক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা দিতে উপস্থিত হন। প্রাথমিকভাবে, পরীক্ষার ফলাফল যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে, তবে পরবর্তীতে নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে অতীতের মতো এ বছরও কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা দেখিয়েছেন।
এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় যে প্রতিযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে পরীক্ষার্থীদের সামনে। শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন জ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন পরিস্থিতি ও নানা ধরনের মানসিক চাপ।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে মোট ১১০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৭টি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৭টি। এছাড়া, একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এবং পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের মেধা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় মূলত মেধাতালিকার ভিত্তিতে, যেখানে পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রস্তুতি এবং পারফরম্যান্স অনুযায়ী স্থান পান। ভালো মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হতে তালিকার শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেয়ে থাকেন, কারণ এসব কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য রয়েছে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আরও নানা ধরনের সুবিধা, যেমন শিক্ষার মান, সুযোগ-সুবিধা এবং পরবর্তী ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে ব্যাপক সম্ভাবনা।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফ্যাক্টর প্রভাবিত করে, যেমন ফি, কলেজের মান এবং সেশন ফি ইত্যাদি। তবে, অনেক শিক্ষার্থী সাধ্যমতো বেসরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন, কারণ এ ধরনের কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া কিছুটা আলাদা এবং গতি একটু বেশি থাকতে পারে। তদুপরি, সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা আগে থেকেই প্রকাশ করেছে। এবারের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়মাবলী যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষত, যেসব পরীক্ষার্থী দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের জন্য দুটি ধাপে নম্বর কাটা হবে, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল না। এই নিয়মের মাধ্যমে পরীক্ষার কঠোরতা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, যাতে শুধুমাত্র মেধাবী এবং প্রস্তুত পরীক্ষার্থীরা সুযোগ পায়।
এছাড়া, এবারের পরীক্ষায় পাস নম্বর পূর্বের মতোই ৪০ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, যেকোনো পরীক্ষার্থীকে ৪০ নম্বর পেতে হবে, তবেই তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে, দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য নম্বর কাটার নিয়মের কারণে, তাদের জন্য এটি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্য শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা এবং মেডিকেল শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নতির জন্য যোগ্য চিকিৎসক ও ডেন্টিস্ট প্রস্তুত করতে এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন