প্রতিবছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে চলে বিপুল অঙ্কের ব্যবসা। কয়েক লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার এই প্রবেশদ্বার পেরোতে কোচিংয়ের ওপর নির্ভর করেন। প্রতিজন শিক্ষার্থীর কোচিং-ফি কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা, যা একটি বৃহৎ অর্থনীতির সৃষ্টি করে। অথচ অনেকেই প্রমাণ করেছেন যে কোচিংয়ের ওপর নির্ভর না করেও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। খুলনার সুশোভন বাছাড় তার উজ্জ্বল উদাহরণ। কোনো কোচিং ছাড়াই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি সবার শীর্ষে উঠে এসেছেন।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ১৯ জানুয়ারি। জাতীয় ফলাফলে সুশোভন ৯০ দশমিক ৭৬ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তার সাফল্য পুরো খুলনা জুড়ে আনন্দের ঢেউ তোলে। আজিজের মোড় এলাকার তার বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল নিয়ে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন।
সুশোভনের পারিবারিক পটভূমি শিক্ষানুরাগী। বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় খুলনার টি অ্যান্ড টি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক। মা বন্দনা সেন গৃহিণী। একমাত্র সন্তান সুশোভনের সাফল্যে তাদের মুখে আনন্দের অশ্রু।
সুভাস চন্দ্র বাছাড় বলেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু কোনো কোচিংয়ের প্রয়োজন হয়নি। বাড়িতেই সে পড়াশোনা করেছে। পরীক্ষার পর বলেছিল, ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পাবে। প্রথম হবে সেটা ভাবিনি, কিন্তু চান্স পাবে নিশ্চিত ছিলাম।’ তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই সুশোভনের বই পড়ার প্রতি অগাধ ঝোঁক ছিল।
সুশোভনের প্রস্তুতির ধরন ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো সময় ধরে পড়াশোনা করিনি বা রাত জেগে পড়া পছন্দ করতাম না। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতাম। তবে বই পড়া আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল। গল্প, উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন এবং থ্রিলার—সব ধরনের বই পড়তাম।’
ফার্স্ট হওয়ার অনুভূতি প্রসঙ্গে সুশোভন বলেন, ‘প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। এই পেশাটির প্রতি আমার আলাদা ভালোবাসা কাজ করত। সব সময় মনে হতো, যদি তাদের মতো হতে পারতাম! সবাই দোয়া করবেন যেন একজন ভালো ডাক্তার হতে পারি।’ উল্লেখ্য, মেডিকেলের পাশাপাশি তিনি কুয়েটেও সুযোগ পেয়েছেন।
মা বন্দনা সেনের প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগঘন। তিনি বলেন, ‘শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে আবেগে কেঁদে ফেলেছি।’
সুশোভন বাছাড়ের সাফল্য নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বার্তা বহন করে—সফলতার জন্য একাগ্রতা ও সঠিক পদ্ধতিতে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন