Choose Your Language

রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

ছাপানো ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে ৬ কোটি শেষ, বই উৎসব বাতিল, তবে অনলাইনে বই পাওয়া যাবে


সরকার এবার সকল শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে পারছে না। প্রাথমিকের তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের বই পেলেও চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণির বই এখনও ছাপানো হয়নি, আর মাধ্যমিকের কোনো শ্রেণির বই ছাপানোর কাজও শীঘ্রই শেষ হবে না। পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই ব্যর্থতায় সন্তুষ্ট নন।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা পাঠ্যবইয়ের সঙ্কটের জন্য এনসিটিবি'র কর্মকর্তাদের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন। বোর্ডে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরতরা জানাচ্ছেন, বর্তমান চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বে ‘অনভিজ্ঞ’, ফলে এত বড় কাজ সামলাতে পারছেন না। তাদের দাবি, তারা প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন।

এনসিটিবি কর্মকর্তাদের দাবি, তারা সব স্কুলে কিছু বই পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন, যাতে বিতরণে ত্রুটি না থাকে। বিশেষ কৌশল গ্রহণ করে তারা বই পৌঁছে দেবেন।

বই ছাপা ও বিতরণের বাস্তবতা

এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই ছাপানো হবে। মাধ্যমিকের ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বইও ছাপা হচ্ছে।

নতুন বছরের প্রথম দিন পর্যন্ত ৬ কোটি বই ছাপা শেষ হয়েছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, আগামী ২-৩ দিনে আরও এক থেকে দেড় কোটি বই ছাপানো হবে এবং ১ জানুয়ারি থেকে সকল শ্রেণির বই বিতরণের চেষ্টা করা হবে। তবে মাধ্যমিকের বই কিছুটা দেরিতে পৌঁছাবে।

বিতরণের ‘কৌশল’

এনসিটিবি বিতরণ নিয়ে একটি বিশেষ কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির বই পাঠানো হবে, যাতে কেউ অভিযোগ করতে না পারে যে তার স্কুলে বই পৌঁছায়নি। এর মাধ্যমে সবার কাছে কিছু বই পৌঁছে দেওয়া হবে, যদিও সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া সম্ভব হবে না।

প্রথমে কে কী বই পাবে?

শুরুতে প্রাথমিকের ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির বই বিতরণ করা হবে, যেগুলো ৭০ লটের মধ্যে ছাপানো হয়েছে। বাকি ২৭ লটের বই ছাপা সম্পন্ন করতে জানুয়ারি মাসের পুরোটা সময় লাগতে পারে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই এখনো ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি, ফলে তাদের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বই কিছু উপজেলায় পাঠানো হবে, তবে নবম ও অষ্টম শ্রেণির অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বই পাবে না।

অনলাইনে বই

যারা বই হাতে পাবেন না, তাদের জন্য এনসিটিবি ওয়েবসাইটে সকল বইয়ের পিডিএফ কপি আপলোড করবে, যা শিক্ষার্থীরা ডাউনলোড করে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবেন।

বই উৎসব বাতিল

বই উৎসব বাতিল করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তে এনসিটিবি একটি সংবাদ সম্মেলন করে বই বিতরণের বিষয়টি জানাবে। সকল স্কুলে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বই প্রদান করা হবে।

কাগজের মান উন্নয়ন

এবার বইয়ের কাগজের মান বাড়ানো হয়েছে। পূর্বে ৭০ গ্রাম কাগজ ব্যবহৃত হলেও এবার ৮০ গ্রাম কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কাগজের উজ্জ্বলতা ৮০% থেকে ৮৫% বৃদ্ধি করা হয়েছে।


এভাবে, মূল অর্থ রক্ষা করে পাঠ্যবই বিতরণ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংশোধন করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad